Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষির অগ্রযাত্রায় পরিবর্তিত জলবায়ুতে টেকসই মাটি ব্যবস্থাপনা

কৃষির অগ্রযাত্রায় পরিবর্তিত জলবায়ুতে
টেকসই মাটি ব্যবস্থাপনা

মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল

মহান বিজয়ের মাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শহিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

 

মুজিববর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উজ্জীবিত হয়ে ৫ ডিসেম্বর পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২১। কৃষি মন্ত্রণালয় এর তত্ত্বাবধানে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, সয়েল সাইন্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয়ে দিবসটি উদ্যাপন হয়ে থাকে। এ বছরের প্রতিপাদ্য Halt soil salinization, boost soil productivity- লবণাক্ততা রোধ করি, মাটির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করি। যা পরিবর্তিত জলবায়ুতে মৃত্তিকার স্বাস্থ্য ও মৃত্তিকা সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। এ দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কৃষি বিপ্লবসহ সব প্রস্তুতি তিনি গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আমাদের উর্বর জমি, আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ, আমাদের পরিশ্রমী মানুষ, আমাদের গবেষণা-সম্প্রসারণ কাজ সমন্বয় করে আমরা খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করব। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সরকার শুরু থেকেই কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী নির্দেশনায় বরেণ্য কৃষি বিজ্ঞানী মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর প্রজ্ঞাসম্পন্ন কর্মপ্রচেষ্টায় আজ কৃষি ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর সাফল্য অর্জিত হচ্ছে। নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দূরদর্শী ও যুগোপযোগী উদ্যোগের ফলে চলমান করোনাকালেও দেশের কৃষির উৎপাদন ও সরবরাহের ধারা অব্যাহত রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ আজ পাট রপ্তানিতে ১ম, পাট ও কাঁঠাল উৎপাদনে ২য়, ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে ৩য়, আম ও আলু উৎপাদনে ৭ম, পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম এবং সামগ্রিকভাবে খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বের ১১তম স্থানে রয়েছে। সাফল্যের এই ধারায় বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যার মূলে রয়েছে আমাদের দেশের উর্বর মাটি।

 

মাটিই মানুষের অধিকাংশ মৌলিক চাহিদার জোগান দেয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে জলবায়ু পরিবর্তনে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদান ০.৪৭ শতাংশের কম। সারা বিশ্বে কার্বন ও মিথেন নিঃসরণ বৃদ্ধিতে বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। ঘটছে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, বন্যা, খরা, অধিকতর তীব্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, সমুদ্রের অম্লকরণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঋতু পরিবর্তন প্রভৃতি। পরিবর্তিত জলবায়ুতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার অর্থনীতি ও মানুষের স্বাভাবিক জীবন হুমকির মুখে পড়বে। জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে ভূমির উর্বরতা হ্রাস পাবে। এতে কৃষি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কৃষিকে এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সংস্থা সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।


মাটিকে সুস্থ, উৎপাদনক্ষম, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই রাখতে বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ এর ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ছয়টি মৃত্তিকা সম্পর্কিত। মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনার ছয়টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সাথে সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদের যুক্তিযুক্ত ও লাভজনক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং মৃত্তিকা স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট কর্তৃক ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৮টি উপজেলার আধা-বিস্তারিত মৃত্তিকা জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেশের সবগুলো উপজেলার মাটির উর্বরতামান অনুযায়ী সুষম সার সুপারিশের লক্ষ্যে অনলাইন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন সিস্টেমে ৫০টি উপজেলার তথ্য-উপাত্ত হালনাগাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষাগারের মাধ্যমে রবি ও খরিফ মৌসুমে ৫৬টি উপজেলায় সরেজমিন মাটি পরীক্ষা করে মোট ৫,৬০০ জন কৃষককে ফসলভিত্তিক সার সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের লবণাক্ত ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্র, বটিয়াঘাটা, খুলনা কর্তৃক ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় ডিবলিং এবং চারা রোপণ পদ্ধতিতে ভুট্টা চাষ, টপ সয়েল কার্পেটিংয়ের মাধ্যমে চিংড়ি ঘেরের পাড়ে বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ করা হচ্ছে। মাদা ফসলের জন্য কলস সেচ ও দ্বিস্তর মালচিং পদ্ধতি, শ্যালো ফারো-রিজ সিস্টেম, ফ্লায়িং বেড এগ্রিকালচার ইত্যাদি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বিভিন্ন মাদা ফসলের লবণাক্ততা সহনশীলতা নিরূপণ করা হয়েছে।


এ ছাড়া ইনস্টিটিউটের লবণাক্ততা মনিটরিং কার্যক্রমের আওতায় উপকূলীয় এলাকার মনিটরিং স্পট থেকে নিয়মিত লবণাক্ততার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি এবং লবণাক্ত পরিবীক্ষণ তথ্য ব্যবহার করে উপকূলীয় এলাকার সম্প্রসারণ কর্মী ও কৃষক ভাইয়েরা মৃত্তিকা ও পানির লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসল চাষের এলাকা সম্প্রসারণ, নিবিড়তা বৃদ্ধি ও অধিক ফসল আহরণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ ছাড়া টেকসই মৃত্তিকা ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১২,৫০০ জন কৃষক, কৃষিকর্মী ও ইউনিয়ন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।


বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার জন্য বেশকিছু সুপারিশমালা প্রদান করেছে। এর মধ্যে কনজারভেশন পদ্ধতিতে জমি চাষ, ফসল বিন্যাস, শস্য আবর্তন, লিগিউম ফসল চাষ, অধিক পরিমাণে ফসলের অবশিষ্টাংশ জমিতে সংরক্ষণ, জৈবসারের প্রয়োগ বাড়ানো, সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক সময়ে রাসায়নিক সার প্রয়োগ ইত্যাদি অন্যতম। টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার জন্য এসব সুপারিশ অনুসরণ করে ফসল আবাদ একান্ত জরুরি। বাংলাদেশে কোনো একটি সীমিত এলাকার মধ্যেই মাটির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ ও ভূমিরূপের ব্যাপক বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়, তাই বাংলাদেশে ভূমি ও মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা একটি জটিল সমস্যা। সেক্ষেত্রে, স্থানভিত্তিক কৃষি উৎপাদন পরিকল্পনা সর্বশেষ মাটি ও ভূমি সম্পদের তথ্যভাণ্ডারের উপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা প্রয়োজন।


কৃষি বিজ্ঞানীরা তাদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে লবণাক্ত সহিষ্ণু, খরাসহিষ্ণু, জলমগ্নতা সহনশীল, উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল প্রতিকূল পরিবেশে চাষের উপযোগী ধান, গম, ভুট্টা, বার্লি, তরমুজ, ডাল, সূর্যমুখী, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসলের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ সম্প্রসারণে সহায়তা করছেন। এভাবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত এলাকায় কৃষি বিপ্লব ঘটবে। এ লক্ষ্য অর্জনে রোডম্যাপ প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ও অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন এবং ৭০০ কোটি টাকার জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেন। মুজিববর্ষ উদ্যাপনকালে সারা দেশে বৃক্ষরোপণ করেছেন। বজ্রপাতে মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে এবং কার্বন হ্রাসে তালগাছ রোপণসহ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্প্রতি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ২৬তম জলবায়ু সম্মেলন বা কপ২৬ অনুষ্ঠিত হয়। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা ১ নভেম্বর ২০২১ গ্লাসগোতে কপ২৬ সম্মেলনস্থলের কমনওয়েলথ প্যাভিলিয়নে ‘সিভিএফ-কমনওয়েলথ হাইলেভেল ডিসকাসন অন ক্লাইমেট প্রসপারিটি পার্টনারশিপ’ শীর্ষক আলোচনায় সিভিএফ এবং কমনওয়েলথের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতার জন্য ৪ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন। সে সাথে প্রধান গ্যাস নির্গমনকারী দেশগুলোকে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের প্রচেষ্টায় সমর্থন করার জন্য তাদের বাধ্যবাধকতা’ পূরণ করার বিষয়টি উল্লেখ করেন।


পরিশেষে পরিবর্তিত জলবায়ুতে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যে টেকসই মাটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির লবণাক্ততার বিরূপ প্রভাবগুলো মোকাবিলা করে সুস্থ বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলাই বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের সফলতা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখি, দেশের কৃষিকে সমৃদ্ধ করি।

লেখক : অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ), কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon